SN Library offers a vast collection of books, e-books, audiobooks, and digital resources for readers and learners of all ages. Enjoy 24/7 access through our user-friendly platform and participate in engaging events like book clubs and workshops. Explore, learn, and grow with SN Library—your gateway to endless knowledge!

Responsive Advertisement

Search Books

 New Books are coming soon... Follow our website to get new books release notification.

December 26, 2024

অবশেষে - Sumaiya Karim

 

অপরিচিত একটা ছেলের সাথে একি বিছানায় নিজেকে আবিষ্কার করে আয়রা। চোখ দুটো যেনো খুলে হাতে চলে আসার উপক্রম তার। যতটা না সে ঐ ছেলে টা কে তার বিছানায় দেখে অবাক হলো তার থেকেও বেশী অবাক সে তার পরিবারের সবাই কে তার রুমে উপস্থিত দেখে।

মনে পড়ছে সে সন্ধ্যার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। এখনো সকাল হয় নি। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে রাত ৮ টা। আচমকা ঘুম ভাঙ্গতে এমন কিছু দেখার জন্য সে নিজেও প্রস্তুত ছিলো না। সারাদিন ঠিক ছিলো সন্ধ্যায় হঠাৎ মাথা ধরায় ঘুমে চোখ লেগে এসেছিলো। কিন্তু এখন এসব? কে এই ছেলে? আর তার বিছানায় ই বা কি করে এলো? আগে কখনো দেখেছে বলেও মনে হয় না! সবার চাহনিতে এটা স্পষ্ট যে কেউই এটাকে ভালো ভাবে দেখছেন না। কেউ তাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেরাই বলতে শুরু করলেন,
–‘তোকে খাইয়ে পড়িয়ে মানুষ করেছিলাম এই দিন টা দেখার জন্য হ্যাঁ? মুখে চুন কালি মেখে দিলি আমাদের ছি!’
আয়রা চট জলদি বিছানা থেকে উঠে যায়। উনাদের কথা শুনে তার মুখ দিতে যেনো কথাই বেরোচ্ছে না। তোতলিয়ে বললো,

–‘বাবা আপনারা যেটা ভাবছেন তা ভুল। আমি এমন কিছু করিনি!’
আয়রার মা অনুপমা এসে মেয়ের গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দেয়। নিজেকে ঠিক ধরে রাখতে পারলো না সে। পড়ে যেতে নিয়েও সামলে নেয়। সবাই কে বোঝানোর চেষ্টা করে যে এই ছেলে কে সে চিনেই না কিন্তু কেউ ওর কথা কানেই তুলছে না। ততক্ষণে বিছানায় শুয়ে থাকা মানুষ টা আদ্রর ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার এক্টিং করলো। সে দেখে বেহাল কান্ড। আয়রা কে দেখলো কান্না করছে এক পাশে বসে। তার মানে যা হওয়ার হয়ে গেছে। আদ্র আয়রা কে ধরে বললো,

–‘আরু পাখি কি হয়েছে কাঁদছো কেন তুমি?’
আয়রা কিছু বলুক তার আগে তার চাচা বললো,
-‘এই ছেলে কে তুমি? আয়রার সাথে কত দিনের সম্পর্ক তোমার?’
–‘আসলে চাচ্চু আমি আর আয়রা একে অপর কে খুব ভালোবাসি!’
আদ্রর কথা শুনে আয়রা অশ্রুসিক্ত নয়নে চেঁচিয়ে বললো,
–‘মিথ্যে সব মিথ্যে কথা। আমি এই ছেলে কে চিনি না!’
–‘না চিনলে ও তোর ঘরে কি করে আসলো?’
–‘আমি জানিনা আমি তো ঘুমে ছিলাম। কেউ তো বিশ্বাস করো আমার কথা প্লিজ!’
আয়রার কথা শুনে আদ্র বললো,

–‘এসব কি বলছো তুমি আয়রা? আমাদের ভালোবাসার ৩ টা বছরের সব কি মিথ্যা কি করে হতে পারে?’
–‘বাবা..
–‘কে তোর বাবা তুই কোনো কথা বলবি না। চুপচাপ বসে থাক এক্ষুনি কাজি আসছে!’
–‘মানে এসব কি বলছেন আপনারা?’ আদ্র বললো।
–‘কেন তুমি না আয়রা কে ভালোবাসো?
–‘হ্যাঁ বাসি!’
–‘ভালোবাসো আর বিয়ে করবে না তা কি করে হয়!’
–‘বিয়ে এখন মানে? আপনাদের কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না!’
–‘বুঝার কোনো প্রশ্ন এখানে আসছে না। যেভাবে আছো চুপচাপ বসে থাকো!’
কিছুক্ষণ পর আয়রা আর আদ্র দুজন কেই কাজি ডেকে বিয়ে পড়ানো হয়। আয়রা কে কেউ বিশ্বাস করছে না দেখে রাগে দুঃখে কবুল বলে দেয়। আদ্র কিছু না বলে সব টা শুধু দেখেই গেলো। শুধু কবুল বললো আর বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলো। তবে সে একটা বিষয়ে খুব অবাক হয় আয়রার বাবা মা চাচা চাচি কেউ ই তাকে এখন কিছু বলছে না। বিয়ে শেষ হতেই আয়রার বাবা কাদের সিংহের মতো গর্জন করে বললো,

–‘এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও। যে মেয়ে আমাদের সম্মানের কথা একবার ও ভাবলো না তাকে নিয়ে আমাদের ও ভাবার কোনো দরকার নেই! আজ থেকে তুমি আমাদের কাছে মৃত!’
আয়রা কাদেরের পায়ের কাছে বসে মিনতির সুরে বললো,
–‘আমি সত্যি বলছি বাবা আমাকে বিশ্বাস করেন। আমি এমন কিছু করিনি। আমি এই ছেলে কে চিনি না প্লিজ বিশ্বাস করেন!’
কাদের দূরে সরে যায়। আয়রা কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়ে। আর অন্যদিকে ঐ মানুষ টি কিছুই বলছে না। একদম চুপচাপ! সব রং তামাশা যেনো তার কাছে উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।
এতো সহজে যে আয়রা কে সে বাগে পেয়ে যাবে ভাবতেই আনন্দে মন নেচে উঠেছে। তবে আয়রার মুখ দর্শনের পর সে মনে মনে বললো,
–‘এতো সবে শুরু মাত্র মাই ডিয়ার আরু পাখি! একটু তেই এতো কাতর হয়ে গেলে বাকি টা কে ভোগ করবে বলো?’ মনে মনে হাসলো ও!

মা অনুপমা আর চাচি রাশেদার ইচ্ছা করছিলো মেয়ে টা কে আটকাতে কিন্তু কারোই ই সাহসে কুলোলো নিজেদের বরের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলার। কিছুক্ষণ পর চাচা রাশেদ বললো,
–‘বাড়ির বড় মেয়ে হয়ে তোর থেকে আমরা এসব আশা করিনি। ছোটদের এই শিক্ষা দিলি? কি শিখলো ওরা তোর থেকে? যেখানে কিনা তুই ওদের আদর্শ ছিলি! চলে যা এখান থেকে নয়তো আমরা ই চলে যাবো! যেই মেয়ে আমাদের মান সম্মান হানী করলো তার পদধুলি যেনো আর কখনো এই বাড়িতে না পড়ে!’
শেষে আর কোনো উপায় না দেখে বাড়ির বাহিরে আসে আয়রা। আর তক্ষুণি তার বাবা ভেতর থেকে দরজা টা তাদের মুখের উপর ঠাস করে বন্ধ করে দেয়। সন্ধ্যার সময় ও সব ঠিক ছিলো মুহুর্তের মাঝে কি করে সব এলোমেলো হয়ে গেলো বুঝে উঠতে পারলো না সে।
এই বাবা মা আর চাচা চাচি কতো আদরে মানুষ করেছে তাকে আর আজ তারাই ভুল বুঝে বাড়ি থেকে বের করে দিলো। আর যার জন্য তারা তাকে ভুল বুঝলো সেই মানুষ টিকে সে চিনে পর্যন্ত না। আর না তো কক্ষনো দেখেছে। সে তো কোনো অন্যায় করে নি তাহলে এটা কিসের শাস্তি দিলো আল্লাহ তাকে? উত্তর টা অজানা!

এক পর্যায়ে অতিরিক্ত কান্না ও দুশ্চিন্তা করার কারণে সে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায় আয়রা।
আদ্র কিছুক্ষণ এগিয়ে গিয়ে দেখলো পেছন থেকে কোনো শব্দ সে শুনতে পাচ্ছে না। তাই পেছনে যেতে বাধ্য হয়। আর গিয়েই দেখলো আয়রা নিস্তেজ হয়ে মাটি তে পড়ে আছে। আর কোনো উপায় না দেখে তাকে কোলে নিয়ে নেয়। আর গাড়ির সিটে বসিয়ে সিট ব্যাল্ট লাগিয়ে দেয়। যখন ব্যাল্ট লাগাচ্ছিলো তখন সেই সুন্দর মুখশ্রীর দিকে চোখ যায় তার। মুখ যদি বলে সুন্দর না বাজে দেখতে তো মন বলবে সত্যি ই আয়রা খুব সুন্দরী রূপবতী একটি মেয়ে। যে কোনো ছেলে কে এক দেখাতেই ঘায়েল করতে যথেষ্ট তার এই সৌন্দর্য।
নিজেকে এই মোহ তে কিছু তেই আটকাতে চায় না বলে আদ্র সঙ্গে সঙ্গে দূরে সরে যায়। আর ফোন টা বের করে মা কে কল দেয়। সুলতানা ছেলের কল পেয়ে সাথে সাথেই রিসিভ করলো। কেননা ছেলে বাড়ি ফিরছে না দেখে উদ্ভট সব চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। তিনি ধমক দিয়ে বললেন,

–‘আদ্র কোথায় তুই? এখনো আসলি না বাসায় হ্যাঁ রাত কত হয়েছে তার ঠিক আছে তোর? কোনো ভদ্র ঘরের ছেলে এতো রাত ওবধি বাহিরে থাকে?’
আদ্র মায়ের কথা শুনে হাসতে থাকলো। যা সুলতানা শুনতে পাচ্ছিলো।
–‘আমি কি কোনো জোকস্ বলেছি তোকে?’
–‘না মা কিন্তু তুমি যেভাবে বলছো মনে হচ্ছে আমি এখনো বাচ্চা।’
–‘বড় আর হয়েছিস কোথায়? ধুর কোথায় তুই বলতো আদ্র। আমার কিন্তু এসব একদম ভালো লাগছে না।’
–‘এইতো মা আমি আসছি। সঙ্গে করে তোমার বউমা কে ও নিয়ে আসছি!’
–‘কিহহহ..?’
হাসতে হাসতে কল কেটে দিয়েছে আদ্র। সুলতানা বার বার কল দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু কল যাচ্ছে না। তাই আদ্রর ছোট বোন তন্নি কে ডাকতে তার রুমে যায়।
–‘তন্নি’
–‘হ্যাঁ মা কিছু বলবে?’
–‘দেখ আদ্র কি যেনো বলছে!’
–‘কেন কি বলছে ভাইয়া?’
–‘ও বলছে ও নাকি বউ নিয়ে আসছে।’
–‘কি বললে আম্মু?’

মায়ের কথা শুনে তার চোখ বড়বড় হয়ে যায়। আর তন্নি আর এক মিনিট ও লেট না করে কাকে যেনো ফোন দেয়। আর কিসব কথা বলে। তন্নির সব কথা বার্তা সুলতানার মাথার উপর দিয়ে গেলো।
সুলতানার স্বামী মানে আদ্রর বাবা মিস্টার সায়ের ঘরে আসতেই আদ্র বলা সব কথা তাকে জানানো হলে তিনি হাসিতে ফেটে পড়েন।
–‘সুলতানা তুমি আমাকে আজকে দারুণ একটা জোকস্ শোনালে!’
–‘আমি জোকস বলি নি!’
–‘এতো রাতে বউ আনবে তোমার ছেলে? এটাও আমার বিশ্বাস করতে হবে? যাকে ১ বছর শতচেষ্টা করেও বিয়ে করাতে পারলে না সে আনবে বউ! হাহাহা!’
সায়ের হাসছে দেখে ভীষণ রাগ হয় সুলতানার। কিন্তু তাদের হাসির মাঝখান দিয়েই হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠে। সুলতানা জলদি দরজা খুলে দেয়। আর আদ্রর কোলে একটা মেয়ে দেখে উপস্থিত দুজন ই ভড়কে যায়। তন্নি তো খুশিতে লাফিয়ে উঠছে।
–‘তার মানে আদ্র এসব সত্যি?’
–‘কেন মিথ্যা বলতে যাবো তোমাদের!’
–‘কিন্তু মেয়েটা কে এভাবে কোথা থেকে নিতে এলি তুই?’
–‘তোমাদের বউ দরকার ছিলো নিয়ে এসেছি।’
–‘কিন্তু কিভাবে?’

আদ্র সব খুলে বললেন সুলতানা আর সায়ের দুজন ই অবাক হয়ে যায়। আরো প্রশ্ন করতে যাবে এমন সময় আদ্র তাড়া দিয়ে বললো,
–‘আর কোনো প্রশ্ন করো না। সকালে উত্তর দিবো এখন খুব ক্লান্ত আমি ওকে নিতে রুমে যাচ্ছি!’
তন্নি খুশি হয়ে বললো,
–‘আমি তোদের জন্য বাসরঘর সাজিয়ে রেখেছি ভাইয়া!’
এবার হতভম্ব হয়ে আদ্র। জোড় পূর্বক ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–‘ধন্যবাস শাক্ষচুন্নি!’
–‘কিহ বললি….
আদ্র তন্নির দিকে ভেঙ্গচি মেরে উপরে চলে যায়। ছল ছল নয়নে তন্নি সুলতানা আর সায়েরের দিকে তাকায়। তিন জনের ই এক অবস্থা। আর তা হলো,
–‘দুনিয়া ডা আন্ধার আন্ধার লাগতেছে!’?

যখন আয়রার জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে দ্বিতীয় বারের মতো আবিষ্কার করে অসংখ্য ফুলে ফুলে সাজানো সেই ঘরে। যাকে সাধারণত বাসর ঘর বলে আখ্যায়িত করা হয়। আলোকিত সেই রুম টায় একবার চোখ বুলিয়ে নেয় সে। খুব সুন্দর করে সাজানো ঘর টি। কিন্তু এখানে সে কি করে আসলো ভাবতেই বিছানা থেকে নেমে পড়ে।
হঠাৎ মাথায় চক্কর দিয়ে উঠে। নিজেকে সামলে নিতেই সব মনে পড়ে যায়। আর বুঝতে পারে খুব সম্ভবত এটা ঐ ছেলের ই বাড়ি। প্রচন্ড রাগে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে সব ফুল মিনিট পাঁচেক এর মধ্যে ছিড়ে ফ্লোরের এক এক প্রান্তে ছুড়ে মারলো আয়রা। তক্ষুনি খট করে দরজা টা খুলে যায়। রুমে প্রবেশ করে আদ্র। আর সদ্য বিয়ে করা বউয়ের এমন সব কর্মকাণ্ড দেখে সে একটু ও চমকালো না। বরং দেখতে থাকলো আয়রার দৌড় কত দূর!

হাত গুঁটিয়ে আদ্র এসব ঠায় দাঁড়িয়ে দেখছে দেখে আয়রার রাগ আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে সে এগিয়ে আসে আদ্রর সামনে। একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। একজন তাকিয়ে আছে ঘৃণা মিশ্রিত চোখে আর অন্যজন ক্ষোভ। আয়রা রাগের মাথায় তার দুঃসাহস টা দেখিয়ে‌ ফেললো।
বাঘিনীর মতো থাবা মেরে আদ্রর শার্টের কলার চেপে ধরে সে। আর তখনি হওয়া বিকট শব্দে পুরো রুম কেঁপে উঠলো..!
আদ্র আয়রা কে দেওয়ালের সাথে চেপে। চোখে মুখে প্রচন্ড রাগের আক্রোশ ঝরে ঝরে পড়ছে যেনো। আর চোখ দুটি তে ফুটে উঠেছে ভয়ংকর রাগ।

বিকট শব্দের একটা বজ্রপাতে পুরো রুম, ঘর শুদ্ধ যেনো কেঁপে উঠলো। বজ্রপাতের কারণেই এই শব্দটি হয়েছে। আদ্রর বেলকনির দরজা খোলা থাকায় শব্দ টি আরো মুখরিত হতে সাহায্য করেছে। এই শব্দে আয়রা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে আর আদ্র কলার ছেড়ে দিয়ে দু পা পিছিয়ে যেতেই আদ্র তাকে‌ চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে,
–‘আমার কলার ধরার সাহস কি করে হয় তোমার?’
অন্যজন নিজেকে সামলে ফের অাগের রাগেই নিজেকে ধরে রেখে স্ট্রং হয়ে বললো,
–‘আর আপনার? আমার পরিবারের কাছে আমাকে খারাপ বানানোর সাহস আপনার কি করে হলো? হাউ ডেয়ার ইউ!’
এই কথার প্রতি উত্তরে ঐ মানুষ টি পুরো ঘর কাঁপিয়ে একটা রহস্যময় অট্রহাসি তে ফেটে পড়ে। আর অন্য জন তা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু বুঝে উঠতে সক্ষম হলো না।

–‘আমার সাহস সম্পর্কে তোমার প্রথম ধারণা এটা। আমি যা করেছি ভুল করিনি। তুমি এটার ই যোগ্য বুঝেছো?’
–‘মানে? কেন করলেন আপনি আমার সাথে এমন?’
চিল্লিয়ে কথা টা বলে সে। আর সে বার বার জিঙ্গেস করতে থাকে কেন তার সাথে এমন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো উত্তর মিললো না। কথার প্রাসঙ্গিক ঝগড়ায় আয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে আরো কিছু বলতে যেতেই আদ্র এক পর্যায়ে আয়রার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয়।
ঘটনাক্রমে আয়রা বোরটের মতো হয়ে গেলো। বস্তুত এমন কিছুর জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। না পারছে আদ্র কে সরাতে আর না তো নিজে সরে আসতে। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যায় সে।
কিছু টা সময় পর ই আদ্র তাকে ছেড়ে দেয় আর একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলে,
–‘এখন থেকে তোমার সাথে যাই হবে সেটা শুধুই আমার ইচ্ছায় বুঝেছো আরু পাখি? অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো সকালে দেখা হচ্ছে!’

বলেই সে স্থান ত্যাগ করলো। আয়রা সেই এক ভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। আর কিছুক্ষণ আগে তার সাথে হওয়া ঘটনার আকস্মিকতায় সে খুব অবাক। আদ্র অনাকাঙ্ক্ষিত এই কাজে ঘৃণায় গা গুলিতে আসলো তার। ওয়াশরুম দেখতে পেয়ে সে ছুটে সেখানে গেলো। আর গিয়েই কুলি করতে থাকে। যখন এতে ও মন শান্ত হলো না তখন সমস্ত মুখে পানির ছিটে মারতে থাকলো।
এতেও কিছু হলো না। শেষে না পারতে ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে নিচে বসে পড়ে সে। হঠাৎ করে জীবনের এই পরিবর্তনে সে খুশি হতে তো পারলো না। তবে জীবনের সব খুশি উল্টো হারালো। বাবা মা চাচা চাচির এতো আদরে বড় হয়েছে যে কখনো কষ্ট পেতে হয় নি। মনে আঘাত যায় নি। কিন্তু আজ এই ঘটনায় নিজে তো খুশি হয় নি বরং পরিবারের সকলে কষ্ট পেলো। তাও একটা মিথ্যা আর ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে!

আয়রার বৃষ্টি খুব পছন্দ তাই সে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। বৃষ্টি তে ভিজতে না পারে দেখতে তো পারবে? দুঃখে বৃষ্টির মতো সে ও যে আজ কাতর। আর বৃষ্টির মতোই অঝোরে চোখে পানি ঝড়াবে সেও। বেলকনিতে গিয়ে দেখলো এটি গ্লাস সিস্টেম। হাতের ছোঁয়ায় গ্লাস টা সরিয়ে দিতেই বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ফোঁটা চলে আসতে থাকলো এপারে। সে চাইলে হয়তো এখন এখান থেকে পালাতে পারতো কিন্তু পালিয়ে আর যাবেই বা কোথায় তার যাওয়ার জায়গায় তো প্রথমেই তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে!
আদ্র চলে যায় অন্য রুমে। আর নিজের করা অপ্রত্যাশিত কাজ টার জন্য নিজের উপর ই রাগ হতে থাকে। এই মেয়ে টাকে ছোঁয়া ও তার জন্য পাপ! সেখানে সে..? কিছু ভাবতে পারছে না আর। দরজা বন্ধ করে দিয়ে সিগারেটে আগুন ধরায়।

এই কয়েক মাসে আয়রার চ্যাপ্টার টা মাথায় ঘুরপাক খেলেই সে পাগলের মতো হয়ে যায়। ভাবতে পারে না কোনো কিছু আর। একটা অতিব দরদের হাহাকার বেড়ে উঠে নিজের মধ্যে। বুকে চিন চিন ব্যথা অনুভব করে। স্মৃতি ময় দিন গুলো চোখ বুঝলেই জ্বলজ্বল করে উঠে আর ভীষণ পিড়া দেয়!
এসব যেনো চাইলেও ভুলতে পারে না সে। এই একটা কষ্ট তাকে সিগারেট খাওয়া শিখিয়েছে। যখনি আয়রার কথা মনে উঠে তখনি তার বাজে রকমের একটা ঘৃণা কাজ করতে থাকে আর সে সিগারেট খায়। আর আজ সেই দিন গুলোর থেকে একটু আলাদা। আর একটার পর একটা সিগারেট শেষ করতে থাকে সে। এবং ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিতে থাকে তার কষ্ট টা। এক হাতে সিগারেট আর অন্য হাত শক্ত করে মুষ্টি বন্ধ করে ধরলো। তার একটাই চোখের বিষ আর একটাই উদ্দেশ্য সে হলো ‘আয়রা!’

সকালে খুব দ্রুত ঘুম ভাঙ্গে আদ্রর। কেননা রাতেই সে ভেবে রেখেছিলো যে ভোরে ঘুম থেকে উঠে সে ঐ রুমে যাবে। যেখানে আয়রা আছে। তার সাথে একি বিছানায় থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলেই সে চলে গিয়েছিলো। আবার নিজেই আসে। রুমের দরজা ঠিক যেমন সে রাতে বন্ধ করে গিয়েছিলো এখন ও ঠিক তেমন টাই আছে। সে রুমে ঢুকতেই চোখ গেলো বিছানায়। সেখানে কেউ ই নেই! আদ্র বেশ ঘাবড়ে যায়। তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে গিয়ে দেখলো সেখানেও নেই। এবার বেলকনিতে যায়। আর সে দেখে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি দোলনায় আধশোয়া হয়ে খুব সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সে। কিন্তু এই সুন্দর ও আরামের ঘুম টা একদমি হজম হলো না তার।

তাই যেই না নিচে টান মেরে ফেলে দিতে নিবে ওমনি সে অনুভব করলো তার হাত প্রচন্ড গরমের তাপে মনে হচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে। বুঝতে দেরি হলো না আসলে ব্যাপার টা কি। আয়রার কপালে হাত দিয়ে দেখলো খুব জ্বর। গা পুড়ে যাচ্ছে এই জ্বরের কারণে। আর পড়নের কাপড়চোপড় আধো ভেজা। তার এও বুঝতে দেরি হলো না যে এই মেয়েটা বৃষ্টি তে ভিজেছে। তার উপর গ্লাস টাও অপেন করা। ফলে বৃষ্টির ফোঁটা খুব সহজেই এখানে চলে এসেছিলো। ফ্লোরে এক কোণায় এখনো কিছু টা পানি ও জমে আছে।
–‘ধ্যাত! এই মেয়ে টা কে আমি মারার আগে এতো নিজেই মরে যাচ্ছে! না না তা কি করে হতে দেই। তোমাকে তো আমার কব্জায় থাকতে হবে আরু পাখি!’

মনে মনে কথা গুলো বলে হাসলো সে। আর কোলে তুলে নেয় আয়রা কে! বিছানায় শুইয়ে ও দিলো যত্ন করে। আর কি করা যায় ভাবতে থাকলো। অনেক ভেবে উপায় বের করা গেলো না। ফলে বাবা মা কে ডাকতে বাধ্য হলো।
আদ্র গিয়ে তার বাবা মা কে কথা টা জানালে তন্নি আর সুলতানা দুই জন ই ছুটে আসে কি হয়েছে দেখতে!
–‘জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে মা দেখো!’
–‘হ্যাঁ তাই তো কিভাবে হলো এটা আদ্র?’
–‘না ওই আসলে রাতে অনেক কেঁদেছিলো।’
–‘মানে?’
–‘রাতে ওর সেন্স আসার পর আমার কোনো কথা না শুনে বেলকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে সারারাত বৃষ্টি তে ভিজেছিলো। তাই এমন হয়েছে!’

আদ্রর বাবা সায়রের কাজ পড়ে যাওয়ায় একটু দেরি করে আসলেন। আর রুমে ঢুকেই বিছানায় জ্বরের ঘোরে কাতরাতে থাকা পরীর মতো মেয়েটির মুখ দেখেই তিনি আঁতকে উঠলেন। এখন যেটা তিনি লক্ষ্য করলেন সেটা রাতের কেন উনার চোখে পড়লো না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। মুখ টা আরো ভালো ও স্পষ্ট ভাবে দেখে উনি ভীষণ রকমের ঘাবড়ে যান। আর উৎকন্ঠা চেপে রাখতে না পেরে বলেন,
–‘আরে এটা তো অরিন!’
অরিন! নাম টা শুনে উনার সামনে থাকা তিন জন-ই অবাক নয়নে উনার দিকে তাকাতে বাধ্য হলো!

No comments:

Post a Comment

SN Library

You can find all types of educational and movie books here.




Comments

Contact Form

Name

Email *

Message *