SN Library offers a vast collection of books, e-books, audiobooks, and digital resources for readers and learners of all ages. Enjoy 24/7 access through our user-friendly platform and participate in engaging events like book clubs and workshops. Explore, learn, and grow with SN Library—your gateway to endless knowledge!

Responsive Advertisement

Search Books

 New Books are coming soon... Follow our website to get new books release notification.

December 25, 2024

বেঁশো ভূত


শিববনগর গ্রামে ভূতের উপদ্রপ বাড়ছে। বিশেষ করে গ্রাম থেকে ডোমকল যাওয়ার রাস্তার পাশে মাঠের মধ্যে যে বড় বাঁশঝাড়টা আছে, সেখানে একদল খেত ভূত-পেতনি আস্তানা গেড়েছে। আঁধার রাতে একা একা কোনও পথচারীকে পেলে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছে। ছোট ছেলেমেয়ে পেলে তো তারা আরও মজা করে তাদের ঘাড় মটকাচ্ছে। ভূতের ভয়ে রাতের বেলা একাকী ও পথ দিয়ে হাঁটা একদম বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে গ্রাম থেকে ডোমকল যাওয়া-আসার ওই একটিমাত্র পথ। আশপাশের মধ্যে ডোমকলে একটিমাত্র বাজার। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে গ্রামের লোককে বাজারে যেতেই হয়। অপ্রয়োজনে যাওয়া বন্ধ করা যায়। কিন্তু প্রয়োজনে যাওয়া বন্ধ করবে কী করে? কারও বাজার করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে, তাকে বাড়ি ফিরতেই হবে। কারও বাড়িতে রাত্রিতে হঠাৎ অসুখের বাড়াবাড়ি, তাকে ডাত্তার ডাকতে যেতেই হবে। কারও স্কুলে পুরস্কার বিতরণী, তাকে বাড়ি ফিরতেই হবে। কারও যুক্তি করে বাজারে গিয়েও কী করে যেন বন্ধুর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি। তাকেও একাকী বাড়ি ফিরতেই হবে। আর ভূত-পেনিগুলো ঠিক তখনই ওদের ধরবে।

ধরার জন্য পেত্নিগুলো এক ফন্দি বের করেছে।

"কীরকম ফন্দি?” গ্রামের শিবমন্দিরের পুরোহিত বৃদ্ধ রামকমল ভট্টাচার্য জিজ্ঞেস করলেন।

সমবেত লোকদের মধ্যে সমর মণ্ডল বেশ গুছিয়ে কথা বলতে পারে। সকলের পক্ষ থেকে সে উত্তর দিল, "বাঁশঝাড়ের যে কয়েকটা বাঁশ রাস্তার ওপর হেলে আছে, পেত্নিগুলো তার ওপর সাদা কাপড় পরে বসে থাকছে।"

"তে-তে-তে-তে-তে-তে-তেইখা-খা-খা-খা- খানে তো ফ-ফ-ফ-ফ-ফন্দি।"

ভট্টাচার্য মশাই হাসতে হাসতে আবার জিজ্ঞেস করলেন, "তা ফন্দিটা কী,

সেটা তো বল!"

সমর রমেনকে নাড়া দিয়ে থামিয়ে দিলে বলল, "এই রমেন, একটু হাস না বাবা। আমি বুঝিয়ে বলছি। এই কয়েকটা বাঁশ তো রাস্তার উপর নুয়ে আছে?"

"আছে!"

"রাস্তা দিয়ে আসতে হলে বাঁশটা উঁচু করে তুলে নীচে দিয়ে গলে আসতে হবে, নয় নীচের দিকে চেপে ধরে ডিঙিয়ে আসতে হবে।"

"হবে। এতে ফন্দির কি হল?"

"নিচু হয়ে গলে আসতে গেলে পেত্নিগুলো বাঁশের ওপর চড়ে চেপে ধরছে। আবার বাঁশের ওপর দিয়ে ডিঙিয়ে আসতে গেলে বাঁশ সমেত চ্যাংদোলা করে

তুলে ধপাস করে ফেলে দিচ্ছে।"

"না, তা হলে তা ভারী বিপদের কথা!"

"না হলে আর আপনার কাছে এসেছি কেন? আপনি এই ভূতগুলো তাড়ানোর

একটা বিহিত ব্যবস্থা করুন!"

ভট্টাচার্যমশাই একটু ভেবেচিন্তে নিয়ে বললেন, "প্রেতাত্মা যখন কোথাও একবার ভর করে তখন তাকে তাড়ানো ভারী শক্ত কাজ বাবা! তারপর সব শুনে যা মনে হচ্ছে, এ ব্রহ্মদৈত্য! হরেন ঘোষালের বউটা অপঘাতে ম'ল। তা ঘোষাল শ্রাদ্ধশান্তি তো ভালভাবে করল না! বেলগাছটা আশ্রয় করে ছিল। তা ঘোষাল বেলগাছটা কেটে ফেলল। এখন মনে হচ্ছে আশ্রয়চ্যুত হয়ে ওটা ওই বাঁশঝাড়েই আশ্রয় নিয়েছে। তা তোমরা সবাই মিলে ঘোষালকে বলো। ভালভাবে শ্রাদ্ধশান্তি করুক। তা হলেই বউটার আত্মা শান্তি পাবে। কুপ্রভাবও কেটে যাবে।"

সকলে মিলে হরেন ঘোষালের বাড়ি গেল।

ঘোষাল তো শুনেই রেগে আগুন, "ইয়ার্কি মারার জায়গা পাও না? আমার বউ মরে পেত্নি হয়েছে? তাও আবার বাঁশঝাড়ের আগল্পেতে। তাতে ক্ষান্ত হয়নি। ভট্টাচার্যের কানে-কানে বলতে এসেছে? থাম, তোমাদের সবক'টার চাক্কে ভূত ছাড়িয়ে দিচ্ছি!”

ভূত ছাড়ানোর জন্য অবশ্য কেউ অপেক্ষা করেনি। পালিয়ে চাবুকের হাত থেকে বেঁচেছিল। এখন হাঁপাতে-হাঁপাতে আবার রামকমল ভট্টাচার্যের কাছে এল। ভট্টাচার্য বললেন, “ঘোষালটা চিরদিনই ওরকম রগচটা। ওই জন্যই বউটার অকালে প্রাণ গেল। এখন দেশসুদ্ধ লোকের ভোগান্তি।"

"সেটা তো বুঝলাম।" সমর বলল, "কিন্তু এখন এর বিহিত কী হবে?" ভট্টাচার্যের কোনও ভাবান্তর হল না। তিনি গম্ভীরভাবে বললেন, "আমার নির্ণয় আমি জানিয়েছি। এখন ঘোষাল যদি না করে, তোমরা করো।"

কথাটা সকলেরই মনে ধরল। তারা চাঁদা তুলে ভট্টাচার্যের বিধানমতে। ঘোষালের বউয়ের শ্রাদ্ধ করল। ব্রাহ্মাভোজন করানো হল। মন্ত্র পড়া হল। যাগযজ্ঞ হল। ধূপধুনো জ্বলল। কিন্তু ভূতের উপদ্রব কমল না। পেত্নিগুলোর উৎসাহ যেন আরও বেড়ে গেল। আগে শুধু আঁধাররাতে হত। এখন জ্যোৎস্নারাতেও হচ্ছে।

পালেদের পটলা সেদিন বাজারে পুতুল বিক্রি করতে গিয়েছিল। পুতুল বিক্রি হতে রাত হয়। ব্যাগভর্তি বাজার করে ফিরছিল। বাজার ভর্তি ব্যাগ নিয়ে ডিঙিয়ে তো আসতে পাবে না। যেই নিচু হয়ে বাঁশের তলা দিয়ে গলে আসতে গেছে, অমনই পেত্নিগুলো বাঁশের ওপর চড়ে চেপে ধরেছে। পটলা তো ভয়ে গোঁ-গোঁ করতে-করতে অজ্ঞান হয়ে গেছে। জ্ঞান ফিরলে দেখে, সাদা কাপড় পরে একটা মেয়ে বাঁশঝাড়ের দিকে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। রতন পাসে দাঁড়িয়ে থাকা পটলের দিকে তাকিয়ে বলল, "কী রে পটলা, সত্যি কি না বল না!"

"একদম সত্যি,” পটলা শপথ করে বলল, "পেত্নিটার গায়ে ধলো কাপুড় ছিল!"

"কী করা যায়?"

ওদিক থেকে তোতলা রমেন বলে উঠল, "ও-ও-ও-ও-ওঝা।"

পাশের গ্রাম কালুপুরের (কেউ কেউ বলে, আগে নাকি ওই গ্রামটার নাম ছিল কালীপুর) ফাঁকু ওঝার কথা রমেন আগেও কয়েকবার তুলেছিল। কেউ গুরুত্ব দেয়নি। ভট্টাচার্যের বিধান ব্যর্থ হওয়ার পর গুরুত্ব না দিয়ে আর

কোনও উপায় ছিল না। সমরও সায় দিল, "দেখাই যাক না! রতন, তুই একবার যা।"

রতন গিয়ে ফাঁকু ওঝাকে ধরে নিয়ে এল।

ফাঁকু ওঝা তার পেল্লাই ভুঁড়ি, ইয়া বড়-বড় গোঁফ-দাড়ি, মাথায় ঝাঁকড়া চুল আর কাঁধে একটা ময়লামতো ঝুলি নিয়ে এসে বাঁশঝাড়ের পাশে রাস্তার ওপর বসে ঝুলির মধ্যে থেকে এটা-ওটা বের করতে লাগল। বাচ্চা ছেলেমেয়েরা ঘিরে ধরে ভূত কেমন, জানতে চাইছিল। ফাঁকু ওঝা বলল, "ভূত-পেত্নি বলে কিছু নেই বাবাসকল। উনারা সব পরি-হুরি। পৃথিবীতে আমাদের যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি ওঁদেরও সৃষ্টি হয়েছে। এই বাঁশঝাড়ে দেখছি একদল ভূতের আসর পড়েছে।"

"তা হলে কী হবে?"

"আমি এমন দোয়া পড়ব, সবাই পালাবে।"

"কিন্তু আপনি চলে গেলেই তো আবার আসবে।"

"সে গুড়ে বালি। আমি সমগ্র গাঁয়ের সীমানা বন্ধন করে দিয়ে যাব।"

"কেমন করে?"

"দ্যাখোই না!"

"ফাঁকু ওঝা কিছু বাঁশের শুকনো পাতা এবং খড়কুটো জড়ো করে আগুন জ্বালল। ঝুলি থেকে একটা ঝাড়ুর মতো কী যেন বের করে দোলাতে থাকল। ।ঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করতে থাকল। ঝাড়ুর মতো ওটা দোলাতে দালাতে গাঁয়ের চারদিকে ঘুরল। তারপর আবার বাঁশঝাড়ের কাছে এসে আর একপ্রস্থ বিড়বিড় করে বলল, "আপদ দূর হয়েছে!"

রতন, সমররা খুব খুশি হয়ে ভূতের ওঝাকে বিদায় করল। কিন্তু ভূত- পত্নিগুলোকে বিদায় করতে পারল না। ওগুলোর উৎসাহ যেন আরও বেড়ে গল। সাঁঝের বেলাতেই দাপাদাপি শুরু করে দিল।

সাহাদের সনাতন মহাজনের ঘর থেকে ফিরছিল। সবে সন্ধ্যে হয়েছে। গাঁয়ের সীমানা বন্ধ করা হয়েছে। আর সবে আঁধার হয়েছে। সনাতন একটু নিশ্চিন্ত মনেই আসছিল। যেই না বাঁশটা ডিঙানোর জন্য পা বাড়িয়েছে, ভূতগুলো বাঁশটাকে সড়াৎ জোরে তুলে দিয়েছে। ফচকে ফটিক রসিকতা করে বলল, "বাঁশের ঝাপটায় সনাতন যখন চিতপটাং ভূতগুলো তখন দড়বড়াং।" সমর সনাতনের কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, "সত্যি করে বল তো, ঠিক কী হয়েছিল?"

"আমি তো পড়ে গেছি। খুব ভয় পেয়ে চিংকারও করে উঠেছি। দেখি, একটা বড়-বড় শিংওয়ালা ভূত এসে আমার বুকের ওপর বসেছে, সারা গায়ে হাত বুলোচ্ছে! আমি ভয়ে আবার চিৎকার করে উঠেছি। উঠে দেখি, কিছু নেই! আরও ভয় পেয়ে গেছি!"

ভয় পাওয়ার মতোই ব্যাপার। কিন্তু উপায় কী করা যায়?

পাশের গ্রামের পলক দাঁড়িয়ে ছিল। সে বলে উঠল, "হাবু গোয়েন্দা, ডাবু গোয়েন্দাকে ডাকলে হয় না।"

"তারা আবার কে?"

"ভূত ধারার গোয়েন্দা।"

"ধুস, ভূত আবার ধরা যায় নাকি?"

"না সমরদা! পটলডাঙার রাজবাড়ির ভূত ধরার গল্প শোনোনি? সত্যি ধরেছিল কিন্তু!"

সমরের ঠিক মনে পড়ছে না। তবে ছোঁড়াদুটোর খুব নাম ছড়িয়েছিল বটে! এমনি এমনি কি আর ছড়িয়েছিল? তা হলে ডাকা যেতে পারে। পলকের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, "পলকভাই তা হলে চলো একবার তাদের কাছেই যাই।"

পলক রাজি হয়ে গেল। সমরের সঙ্গে গিয়ে হাবু গোয়েন্দা ডাবু গোয়েন্দাকে খুঁজে বের করল।

হাবু আর ডাবু এলে ছেলেমেয়েরা বলল, "কী করে ভূত ধরো দেখাতে হবে।" হাবু জানাল, "আমাদের প্রথমে তদন্ত করে দেখতে হবে!"

"তদন্ত করে দেখতে হবে?" সমর ভ্রু কোঁচকালো, "ভূতের আবার কী তদন্ত হবে?"

"দেখুন না!" ডাবু সপ্রতিভ জবাব দিল, "আমরা তো কিছু গোপনে করছি না। আমাদের কাজ একদম 'খুললাম খুললা'। তবে এখন কোনও প্রশ্ন করা যাবে না। ঠিক আছে?"

"ঠিক আছে।”

"তা হলে আমরা প্রথমে এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে চাই, যারা ভূতের হাতে হেনস্থা হয়েছে। কেউ এখানে আছেন?"

"অনেকেই আছে।”

সমর প্রথমে পালেদের পটলাকে এগিয়ে দিল। পটলার কাছে সব শোনার পর হাবু জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা, ধলো কাপড় পরা মেয়েটা তো জঙ্গলে ঢুকে গেল। আপনার ব্যাগভর্তি বাজারের কী হল? সেগুলো ছিল?"

সমর ভেবে পেল না, ভূতের সঙ্গে বাজারের সম্পর্ক কী! কিন্তু কোনও প্রশ্ন করা যাবে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল।

পটলা মনে করার চেষ্টা করল। ভূতের হাত থেকে যে প্রাণটা বেঁচেছে, তখন সেইটাই বড় কথা। বাজারের কথা কে ভেবেছে? কিন্তু না, ছিল না। পটলা ভাল করে ভেবে নিয়ে উত্তর দিল, "না, গোয়েন্দাবাবু! ছিল না!"

"তা হলে ছিল না? আর কেউ?"

সমর কিছু না বলে সাহাদের সনাতনকে এগিয়ে দিল। ডাবু তার সব কথা শুনে জিজ্ঞেস করল, "শিংওয়ালা ভূতটা গায়ে হাত বুলিয়ে চলে যাওয়ার পর আপনার পকেটে টাকাগুলো ছিল?"

"আর বলবেন না! ভূতের নাম করে আমি টাকাগুলো মেরে দিচ্ছি বলে দাদা কি অশান্তিটাই না করলেন!"

"কী করবে বলুন, দাদা জানেন, ভূতে শুধু ঘাড় মটকায়। তিনি তো জানেন না, ভূতে টাকাও নেয়। কিন্তু দেখছি, এখানকার ভূতপেত্নিগুলো টাকা নেয়, বাজারের ব্যাগও নেয়!"

"আবার চকোলেটও খায়!" ভিড়ের মধ্যে থেকে একটা বছর দশেকের ছোট্ট মেয়ে বলে উঠল।

হাবু তার কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, "কী করে জানলে বলো তো?"

"দাদু আনছিল তো! ভূতগুলো কেড়ে নিয়েছে!"

"তাই? আমরা যখন ধরব তুমি খুব করে বকে দিয়ো ভাই!"

জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করে তারা বাঁশঝাড়ের কাছে গেল। নুয়ে-পড়া বাঁশগুলো পরীক্ষা করে দেখল। আশেপাশের জঙ্গলে কী যেন খুঁজে বেড়াল। অবশেষে হতাশ হয়ে ফিরে সবাই জানাল, "না, কিছু বোঝা গেল না।"

হতাশায় সবাই এ-ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল।

হাবু, ডাবু তাদের বিখ্যাত টর্চ নিয়ে রাত্রিবেলাতেও বাঁশঝাড়ের দিকে ঘোরাঘুরি করতে লাগল। কয়েকদিন আর কেউ ভূতের হাতে পড়েনি। তা, সে তো কাছে অন্য লোক থাকলেও ভূত আসে না। হাবু, ডাবু আছে, তাই আসছে না। চলে গেলেই আবার আসবে। তা হলে আর সমাধান কী হল?

সত্যিই কিছু হল না। ক'দিন পরে এসে হাবু ডাবু জানিয়ে দিল, "আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের দ্বারা হবে না।"

সমর বলার চেষ্টা করল, "তোমরা অন্তত আর-একবার চেষ্টা করো!"

হাবু, ডাবু রাজি হল না। গাঁ ছেড়ে চলে গেল।

পরের রাতেই মণ্ডলদের নয়ন ভূতের হাতে নাকাল হল। তার পরের রাতে হইচই চিৎকারে প্রায় সবাই বাঁশঝাড়ের দিকে ছুটল।

গিয়ে দেখে, একটা শিংওয়ালা ভূতকে বাঁশের সঙ্গে হাবু দড়ি দিয়ে বাঁধছে। আর ডাবুর বাঁ হাতের কবজি দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটছে। ডান হাত দিয়ে সেটা বন্ধ করার চেষ্টা করছে।

লোকজন জড়ো হতেই হাবু বলল, "এই হচ্ছে আপনাদের বাঁশঝাড়ের ভূত! সঙ্গে একটা পেত্নিও ছিল। পালিয়ে গেছে। তবে একটা যখন ধরা পড়েছে, ওটাকেও পাওয়া যাবে।"

ডাবু গিয়ে একটানে তার মুখ থেকে মুখোশটা খুলে দিল।

সবাই দেখল, বেঁশো ভূত আর কেউ নয়-হাটপাড়ার কালু-চোর। সবাই একসঙ্গে পাইকারি হারে এমন কিল চড় ঘুসি মারতে লাগল যে, কালু-চোরের এখন-তখন অবস্থা। সনাতনের রাগটা যেন সবার চেয়ে অনেক বেশি। এই ভূত- বেশী চোরের জন্যই তাকে অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে। সে একই সঙ্গে হাত এবং মুখ চালাতে লাগল, "বেটা চোর। চুরি করার নতুন ফন্দি বের করেছে। ভূত সেজেছে! তোমার ভূত আমি ছাড়িয়ে দিচ্ছি!"

হাবু এগিয়ে বলল, "দেখুন, এর পর আর মারধোর করলে ও সত্যিই পটল তুলবে। সেক্ষেত্রে অন্যজন কে ছিল, সেটা আর জানা যাবে না। অথচ সেটা জানা দরকার। তার চেয়ে পুলিশকে খবর দিন।"

পুলিশের নাম শুনে কালু কেঁপে উঠল।

তোতলা রতন বলল, "ব্যা-ব্যা-ব্যা-ব্যা-ব্যাটাকে পু-পু-পু-পু পুলিশেই দা-দা- দা-দা-দা-দাও!"

সমর বাধা দিলে বলল, "না, ওকে গাঁয়ে নিয়ে চল। আগে হাতের সুখ করে আচ্ছা করে পেটাব। তারপর পুলিশে দেব।"

সবাই সমরের কথায় সায় দিল। কোমরে দড়ি-বাঁধা কালু-চোরকে গাঁয়ের দিকে টানতে-টানতে নিয়ে গেল। পলক এসে হাবু, ডাবুকে ধরল। 

"কী করে বুঝলে বলো তো, যে, বাঁশঝাড়ের ওগুলো আসলে ভূত নয়, মানুষ?"

হাবু উত্তর দিল, "মানুষ না হলে, বাজার, টাকা, চকোলেট আর কে নেবে?"

"তা হলে, 'পারব না' বলে তোমরা পালালে কেন?"

"পালাইনি তো!" ডাবু বলল, "আমরা শুধু পালানোর ভান করেছিলাম যাতে চোরেরা জানে যে, আমরা চলে গেছি। না হলে কি এত তাড়াতাড়ি ধরা পড়ত!"

"তা সত্যি!

আজ কী করে ধরলে বলো তো?"

"হ্যাঁ, ধরাটা টু মুশকিল ছিল!" হাবু জানাল, "কারণ, কালুরা দু'জন ছিল। কিন্তু একজনের বেশী লোক থাকলে ধরছিল না। একজনে দু'জনের সঙ্গে মারামারি করা যায়, কিন্তু দু'জনের একজনকে আটকে রাখা যায় না।"

"তা হলে আজ কী করে রাখলে?"

"আমরাও দু'জন ছিলাম।"

"তোমরা যে বললে একা না থাকলে ধরে না!"

"হ্যাঁ!" ডাবু উত্তর দিল, "সামনে আমি একাই ছিলাম। দেখতে না পায় এরকম দূরত্বে হাবু অপেক্ষা করছিল।"

"ওকে খবর দিলে কী করে?"

"কেন? আমাদের কাছে ছোট ছোট 'ওয়‍্যারলেস সেট আছে, তা জানো না? যেই ভূতে ধরেছে আমিও 'ভূত' বলে ভূতকে জড়িয়ে ধরেছি। ধরা পড়ে গেছে বুঝে পালাবার জন্য ভূতটা আমার হাতে ছুরি বসিয়ে দিয়েছে। অন্য ভূতটা ছুটে আসছিল। কিন্তু ততক্ষণে সাইকেল চড়ে হাবুও পৌঁছে গেছে। হাবু এসে হাত মটকে ছুরিটা কেড়ে নিয়েছে। অন্য ভূতটা বেগতিক দেখে বেপাত্তা হয়ে গেছে।"

কী বুদ্ধি তোমাদের! আমাদের তোমাদের দলে নেবে?"

"নেব। না হলে, তোমাকে এরকম একটা দল করে দেব। কিন্তু তার জন্য আমাদের বেঁচে থাকতে হবে এরকম রক্ত ঝরতে থাকলে বেশিক্ষণ বাঁচব না।"

পলকের খেয়াল হল, সত্যি তো! ডাবুর হাত দিয়ে এখনও রক্ত পড়ছে।

সে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার হাত ধরল।

No comments:

Post a Comment

SN Library

You can find all types of educational and movie books here.




Comments

Contact Form

Name

Email *

Message *